নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে এনসিপি’র ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা: 'নতুন বাংলাদেশের' স্বপ্নযাত্রা

ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০২৫: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শীর্ষক ২৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হওয়া এনসিপির সমাবেশে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এই ইশতেহারকে 'নির্বাচনী ইশতেহারের' মতো বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, যেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছর এই দিনে এই শহীদ মিনার থেকেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের ঐতিহাসিক এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষ থেকে নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণ ও অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে এসেছিল। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং উল্লেখ করেন যে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিলোপ এখনো ঘটানো সম্ভব হয়নি।

এনসিপির এই ২৪ দফা ইশতেহারে একটি নতুন সংবিধান ও 'সেকেন্ড রিপাবলিক' গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:

নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক: দেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠন।

জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার: গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং এর সঙ্গে জড়িত সকল ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা।

গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার: গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার সাধন।

ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বিচারব্যবস্থা ও বিদ্যমান আইনের সংস্কার।

সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন: জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একটি সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা।

জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে তোলা।

গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার: তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে গ্রাম পার্লামেন্ট এবং শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন।

স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং একটি শক্তিশালী ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ গড়ে তোলা।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য ও জাতিগঠনে শিক্ষানীতি: সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং জাতি গঠনে সহায়ক একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন।

গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব: গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা: সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মানুষের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা।

নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন: নারীর নিরাপত্তা, অধিকার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।

মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি: একটি মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

তারুণ্য ও কর্মসংস্থান: তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের ক্ষমতায়ন।

বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি: দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি গ্রহণ।

টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব: টেকসই কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জন।

শ্রমিক-কৃষকের অধিকার: শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার নিশ্চিত করা।

জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা: জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা: আধুনিক নগরায়ন, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং আবাসন পরিকল্পনা।

জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং নদী ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষা।

প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার: বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল: দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি এবং কার্যকর জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল প্রণয়ন।

নাহিদ ইসলাম জানান, এনসিপি দায় ও দরদের রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছিল এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলেছিল, যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনোই ফিরে আসবে না। এই ইশতেহারের মাধ্যমে এনসিপি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি বিস্তারিত রূপরেখা এবং কর্মসূচি তুলে ধরেছে।

Comments

Popular posts from this blog

ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট পদে ৪৬৮ জন লোক নিবে পানি উন্নয়ন বোর্ড

বিভিন্ন পদে ৭২ জন লোক নিবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড